সুবহানাল্লাহ কখন বলতে হয় জানেন না তাই তো? সুবহানাল্লাহ এর অর্থ জানতে মন ব্যাকুল হয়ে আছে? সুবহানাল্লাহ এর ফজিলত সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন ?
না জানা দোষের কিছু না। তবে জানার আগ্রহ থাকতে হবে। এজন্য আপনার সুবিধার্তে সকল সহীহ তথ্য একসাথে আপনার সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।
এই পোস্টে আপনি সুবহানাল্লাহ এর বাংলা অর্থ সহ সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি এর অর্থ সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
আরো জানুনঃ ২০২৪ সালের ছুটির তালিকা
সুবহানাল্লাহ অর্থ কি | সুবহানাল্লাহ এর মানে কি?
সুবহানাল্লাহ কত মধুর একটা শব্দ। আপনি চোখটা বন্ধ করে মন থেকে একবার সুবহানাল্লাহ উচ্চারণ করে দেখেন, আপনার মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি কাজ করবে।
সুবহানাল্লাহ শব্দের অর্থ সংক্ষেপে বললে আল্লাহর পবিত্রতাকে বোঝানো হয়। কিন্তু সুবহানাল্লাহ কথাটির অর্থ এত সংক্ষেপে বললে হয়তো এর পূর্ণতা বোঝাতে পারবো না।
তাই পোস্টটি মন দিয়ে পড়লে সুবহানাল্লাহ কথাটির পূর্ণ অর্থ আপনি বুঝতে পারবেন।
আল্লাহ পবিত্র। তাঁর পরিকল্পনা নির্ভুল, মানুষ সেটা বুঝুক বা না বুঝুক।
অতীতে আল্লাহ তা’আলা আপনাকে যেভাবে পরিচালনা করেছেন তা নিখুঁত। সেটা আপনি আপনি বোঝেন বা না বোঝেন।
আর ভবিষ্যতেও আল্লাহ তায়া’লা আপনাকে যেভাবে পরিচালনা করবেন, আপনি বোঝেন বা না বোঝেন সেটাও নির্ভুল।
আল্লাহর ভালোবাসা নির্ভুল,তাঁর দয়া নির্ভুল,তাঁর বিজ্ঞতা নিখুঁত। এক কথায় আল্লাহতালার সব কিছুই নিখুঁত।
আমাদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক দিয়ে সেটা বুঝি বা না বুঝি। আর এই নির্ভুলতার সাক্ষ্য দিই আমরা সুবহানাল্লাহ বলার মাধ্যমে। আর এই কথা বলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়া’লার পবিত্রতা ঘোষণা দিয়ে থাকি। সুবহানাল্লাহ কখন বলতে হয়
আরো জানুনঃ হানি নাটস এর উপকারিতা
সুবহানাল্লাহ কখন বলতে হয় | সুবহানাল্লাহ এর তাৎপর্য
সুবহানাল্লাহ এর অর্থ জানার পরে নিশ্চয়ই এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে সুবহানাল্লাহ কখন বলতে হয়?
হ্যাঁ এটা আমাদের সবার মনেই আসে।
চলুন এ বিষয়ে জানা যাকঃ
সুবহানাল্লাহ বলে আমরা সাক্ষ্য দেই- আল্লাহ হলেন সকল ভুল, ত্রুটি এবং সমালোচনার ঊর্ধ্বে।
হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন কাফেরদের সাথে সন্ধি করতে যাচ্ছিলেন তখন এ ব্যাপারে কোন সাহাবী সম্মত ছিলেন না।
যখন সন্ধির চুক্তিগুলো লেখা হচ্ছিল। কুরাইশদের প্রতিনিধি হিসেবে নবীজি (সঃ) কে রাসুলুল্লাহ লেখা হচ্ছিল কিন্তু কাফেররা বলে উঠলো আমরা তো আপনাকে রাসুলুল্লাহ বলে বিশ্বাস করি না।তাই রাসুলুল্লাহ এর পরিবর্তে আব্দুল্লাহ এর ছেলে মুহাম্মদ লেখেন।
তাদের এই কথাই সাহাবীরা চরম ক্ষুব্ধ হলো। তখন সব সাহাবীরা এক সাথে সুবহানাল্লাহ বলে চিৎকার করে উঠলেন।কারণ তারা ভাবল রাসুলুল্লাহ কথাটা মুছে দেয়া আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ করার মতো অপরাধ। ফলে সুবহানাল্লাহ কখন বলতে হয় সে সম্পর্কে এখান থেকে ধারণা পাওয়া যায়।
ধরেন আপনাকে নিয়ে কেউ কুৎসা রটাচ্ছে। আপনাকে নিয়ে নানান অপবাদ দিচ্ছে। রাস্তা দিয়ে যখন সে ব্যক্তিটা মনের আনন্দে হেঁটে যাচ্ছে আপনি তখন তাকে দেখে ভাবছেন সে তো দিব্যি ভালো আছে।
আল্লাহ কেন তাকে কোনো সমস্যার মধ্যে ফেলছে না? আল্লাহর ন্যায় বিচার কোথায়? তার তো বড় কোন বিপদ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কেন সেটা হলো না? আপনার মনের মধ্যে তখন এসব প্রশ্ন না নিয়ে এসে আপনার বলা উচিত “সুবহানাল্লাহ “।
কারণ আল্লাহর ন্যায় বিচার সবসময় আপনার ন্যায় বিচার থেকে উত্তম। আল্লাহর পরিকল্পনা সবসময় আপনার পরিকল্পনা থেকে শ্রেষ্ঠ।
আল্লাহ যা জানেন আপনি তা জানেন না। এজন্য ওই ব্যক্তিটাকে আল্লাহ কেন ছাড় দিল এমনটা না ভেবে আপনার বলা উচিত “সুবহানাল্লাহ”।কারণ আল্লাহ ওই ব্যক্তিটাকে কিভাবে শাস্তি দিবেন,কোন অবস্থায় শাস্তি দিবেন সেটা একমাত্র আল্লাহই নির্ধারণ করে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ কখন বলতে হয় এখান থেকে নিশ্চয়ই আপনি ধারণা পেয়েছেন।
সুবহানাল্লাহ এর ফজিলত | সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন-যে ব্যক্তি একবার সুবহানাল্লাহ বলবেন আল্লাহ তায়া’লা তার আমলনামায় জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত সওয়াব দ্বারা পূর্ণ করে দিবেন।
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় চারটি কথা হলোঃ
- সুবহানাল্লাহ
- আলহামদুলিল্লাহ
- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
- আল্লাহু আকবার
একবার এক বেদুইন নবীজি (সঃ) এর নিকট এসে বললেন – হে আল্লাহর রাসূল। আমাকে একটা ভাল কাজের শিক্ষা দিন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে শিখিয়ে দিলেন “সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ ওলা ইলাহা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহু আকবার”।
লোকটি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বললেন আপনি যে আমাকে “সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ ওলা ইলাহা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহু আকবার” শিখালেন। এই বাক্যগুলো তো আল্লাহর জন্য। এর জন্য আমি কি পাব?
নবী (সঃ) তখন তাকে বললেন, তুমি যখন বলবে সুবহানাল্লাহ, তখন আল্লাহ উত্তর দিবেন তুমি সত্য বলেছ।
যখন বলবে আলহামদুলিল্লাহ,তখন আল্লাহ উত্তরে বলবেন তুমি সত্য বলেছ।
আবার তুমি যখন বলবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। তখন আল্লাহ বলবেন তুমি সত্য বলেছ।
আবারো তুমি যখন বলবে আল্লাহু আকবার। তখনো আল্লাহ বলবে তুমি সত্য বলেছ।
এরপরে তুমি যদি বল আল্লাহুম্মাগ ফিরলি। তখন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলবেন, তোমাকে মাফ করে দিলাম।
তুমি যদি বলো আল্লাহুম্মা হামনি।তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাকে ইতোমধ্যেই রহম করেছি।
এরপর তুমি যদি বলো আল্লাহুম্মার জুকনি।তখন আল্লাহ উত্তর দিবেন ইতিমধ্যেই আমি তোমাকে রিজিক দান করেছি।
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি এর অর্থ
سبحان الله وبحمده ، سبحان الله عظيم
উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম।
মহান সেই আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তারই,মহান সেই আল্লাহ যিনি সকল মর্যাদার অধিকারী।
রাসুলে করিম সাঃ বলেছেনঃ দুটি কালিমা আছে, যেগুলো উচ্চারণ করতে খুবই সহজ এবং মিজানের পাল্লায় ওজনে অনেক ভারী।
সেটি হলোঃ
“সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম” এটি বুখারী শরীফের সর্বশেষ হাদিস।
কোন ব্যক্তি যদি হাশরের মাঠে তার মিজানের পাল্লা ভারী করতে চাই তাহলে তার উচিত হবে বেশি বেশি “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম” পড়া।
এই কালিমা বেশি বেশি পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা তার অভাব দূর করে দেবেন ইনশাল্লাহ ।
শেষ কথা-
সুবহানাল্লাহ শব্দটি ছোট হলেও এর ফজিলত অনেক বেশি। যা নিয়মিত আমল করলে আপনার আমলনামায় অগণিত নেকি জমা হতে থাকবে। আপনি যদি সময় না পান সারাদিনে অন্তত মাত্র দুই বা পাঁচ মিনিট সুবহানাল্লাহ জিকির করুন।এতেই আল্লাহতালা আপনার আমলনামা অসংখ্য নেকি দ্বারা পূর্ণ করে দেবেন ইনশাল্লাহ।এছাড়া সুবহানাল্লাহ কখন বলতে হয় জানার ফলে আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা যে কতটা নিখুঁত এবং ত্রুটিমুক্ত তা আপনাকে বার বার মনে করিয়ে দিতে সাহায্য করবে।